পরিচয়
হযরত আবু বকর (রা.) ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা। তিনি মক্কার প্রসিদ্ধ কুরাইশ বংশের তায়িম গোত্রে ৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাল্য নাম আব্দুল্লাহ, উপাধি সিদ্দিক ও আতিক। পিতার নাম উসমান, ডাকনাম আবু কুহাফা এবং মাতার নাম সালমা, ডাকনাম উম্মুল খায়ের। তাঁরা হযরত মুহাম্মদ (স.)- এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত আবু বকর (রা.) ছিলেন বয়সের দিক থেকে হযরত মুহাম্মদ (স.)- এর চেয়ে তিন বছরের ছোট। মহানবি (স.)-এর প্রায় সমবয়সী হওয়ায় হযরত আবু বকর (রা.)-এর সাথে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব ছিল। তিনি উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা (রা.)-এর পিতা ও হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর শ্বশুর।
ইসলাম গ্রহণ
পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন হযরত আবু বকর (রা.)। তিনি রাসুল (স.)-কে খুব বিশ্বাস করতেন। একদা তিনি ব্যবসার উদ্দেশ্যে ইয়ামেনে গমন করেন। মক্কায় ফিরে শুনলেন হযরত মুহাম্মদ (স.) নবি দাবি করছেন এবং ইসলাম ধর্ম প্রচার করছেন। তিনি রাসুল (স.)-এর দরবারে হাজির হয়ে কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করেন।
চরিত্র ও গুণাবলি
হযরত আবু বকর (রা.) ছিলেন স্বল্পভাষী, সাহসী, ধৈর্যশীল, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী। হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর প্রতি ছিল তাঁর অটল বিশ্বাস। রাসুল (স.)-এর মে'রাজের (ঊর্ধ্বগমন) ঘটনা অকপটে একমাত্র তিনিই বিশ্বাস করেন। তাই তিনি সিদ্দিক উপাধিতে ভূষিত হন। সততা, ধর্মভিরুতা ও বদান্যতার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। দুঃখী ও আর্তের সেবায় তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেন। এজন্য তিনি আরব সমাজে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও মর্যাদাবান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
তিনি ছিলেন নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির লোক। কুরআন পাঠের সময় তাঁর দুই চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতো। ইসলামের সেবায় হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর দান অতুলনীয়। তিনি ইসলামের জন্য তাঁর সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছিলেন। মসজিদে নববি ও হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর বাসগৃহ নির্মাণ এবং তাবুক অভিযানে তিনি অর্থ ব্যয় করেন। তিনি হযরত বেলাল (রা.)-সহ অসংখ্য ক্রীতদাসকে ক্রয় করে স্বাধীন ও মুক্ত করে দেন।
ইসলাম প্রচার
ইসলাম গ্রহণের পর হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) রাসুল (স.)-এর সঙ্গে ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিত হন। মক্কার আশপাশের গোত্রে তিনি ইসলামের দাওয়াত দেন। হজের মৌসুমে বিভিন্ন তাঁবুতে গিয়েও তিনি ইসলামের প্রতি লোকদের আহবান করেন। তাঁর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় কুরাইশ বংশের বিশিষ্ট যুবক উসমান (রা.), যুবাইর (রা.), আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রা.), সা'দ (রা), জ্বালহা (রা.)-এর মতো আরও অনেক সাহাবি ইসলাম গ্রহণ করেন।
মদিনায় হিজরত
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর হিজরতের সাথী ছিলেন। রাসুল (স.) হিজরতের আদেশপ্রাপ্ত হন এবং হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-কে অবগত করেন। তিনি রাসুল (স.) থেকে হিজরতের কথা শুনার পর রাত্রে আর ঘুমাতেন না, অপেক্ষায় থাকতেন কখন রাসুল (স.) এসে তাঁর সাথে হিজরত করার জন্য ডাক দেবেন। গভীর রাত্রে তিনি রাসুল (স.)-এর ডাকে সাড়া দেন এবং উভয়ে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হন। পথিমধ্যে তাঁরা কাফির শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সাওর নামক পর্বতের গুহায় আশ্রয় নেন। সেখান থেকে মদিনায় হিজরত করেন।
খলিফা নির্বাচন
হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর ওফাতের পর হযরত উমর (রা.) ও অন্য সাহাবিগণ হযরত আবু বকর (রা.)- কে খলিফা নির্বাচনের ব্যাপারে পরামর্শ করে তাঁকে ৮ই জুন ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা নির্বাচন করেন। রাসুল (স.)-এর ওফাতের পর মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ সময় কিছু লোক নবি হওয়ার মিথ্যা দাবি করে, আবার কেউ কেউ যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানায়, কেউ কেউ ইসলাম ত্যাগ করে। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) কঠোরভাবে সমস্ত বিশৃঙ্খলা দূর করেন ও শান্তি স্থাপন করেন। তাঁর শাসনামলে ৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দে ইয়ামামার যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে অনেক হাফিয ও ক্বারি সাহাবি শহিদ হন। এরপর তিনি কুরআন সংরক্ষণ ও সংগ্রহ করার জন্য হযরত যায়েদ ইবনু সাবিত (রা.)- কে নির্দেশ দেন। হযরত যায়েদ ইবনু সাবিত (রা.) আদেশপ্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন সাহাবি থেকে গাছের বাকলে, পশুর হাড় ও চামড়ায় এবং মসৃন পাথরে লিখিত কুরআনের আয়াতসমূহ সংগ্রহ করেন।
ওফাত
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ২৩শে আগস্ট ৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তিকাল করেন। তাঁকে হযরত আয়েশা (রা.)-এর কামরায় হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর পাশে মদিনায় সমাহিত করা হয়।
রাসুল (স.)-এর ওফাতের পর হযরত আবু বকর (রা.) ইসলাম রক্ষায় অসাধারণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর আদর্শ সকল মানুষের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়।
| কাজ: শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে হযরত আবু বকর (রা.)-এর চরিত্রের দুটি গুণ লিখে একটি প্ল্যাকার্ড তৈরি করবে। | 
Read more